Care Your Baby

Care and protection of newborns and young children in winter

শীতকালে নবজাতক ও ছোট বাচ্চাদের যত্ন ও সুরক্ষা: বাবা-মায়ের জন্য পরামর্শ

বাংলাদেশের শীতকাল নবজাতক এবং ছোট বাচ্চাদের জন্য একটু কঠিন হতে পারে, কারণ ঠান্ডা আবহাওয়া এবং শুষ্ক বাতাস তাদের স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এ সময় বিশেষ যত্ন এবং সঠিক প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ। শীতকালে বাচ্চাদের যত্ন ও সুরক্ষার বিষয়ে কিছু উপকারী টিপস দেওয়া হলো।

১. বাচ্চার জন্য সঠিক পোশাক নির্বাচন

শীতের সময় বাচ্চাদের শরীর উষ্ণ রাখা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

  • লেয়ারিং: বাচ্চাকে গরম রাখতে প্রথমে সুতি কাপড়ের একটি স্তর দিয়ে শুরু করুন এবং তারপর ওপরের দিকে উলের কাপড় দিন।
  • মোজা এবং টুপি: বাচ্চাদের মাথা, হাত, এবং পা দিয়ে শরীরের তাপ দ্রুত বের হয়ে যায়। তাই টুপি, হাত মোজা এবং পা মোজা পরানো উচিত।
  • আরামদায়ক পোশাক: পোশাক এমন হতে হবে যাতে বাচ্চা সহজে নড়াচড়া করতে পারে। খুব টাইট বা খুব ঢিলেঢালা পোশাক এড়িয়ে চলুন।

২. ত্বকের যত্ন

শীতের শুষ্ক আবহাওয়া বাচ্চাদের ত্বক শুষ্ক এবং সংবেদনশীল করে তুলতে পারে, তাই সঠিক ত্বকের যত্ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

  • ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার: শীতকালে প্রতিবার গোসলের পর বাচ্চার ত্বকে মৃদু এবং প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার লাগান।
  • ঠোঁটের যত্ন: ঠাণ্ডায় বাচ্চাদের ঠোঁট শুকিয়ে যেতে পারে, তাই তাদের ঠোঁটে বেবি লিপ বাম ব্যবহার করুন।
  • শীতে ত্বকের সুরক্ষা: বাইরে বের হলে গরম কাপড় দিয়ে পুরো শরীর ঢেকে দিন যাতে ঠাণ্ডা বাতাসে ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

৩. খাবার ও পুষ্টি

শীতকালে বাচ্চাদের খাদ্যতালিকা তাদের সঠিক পুষ্টি এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

  • মাতৃদুগ্ধ: নবজাতকের জন্য মাতৃদুগ্ধ সবচেয়ে ভালো, যা তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং শরীর উষ্ণ রাখতে সাহায্য করে।
  • পুষ্টিকর গরম খাবার: শীতকালে বাচ্চাদের জন্য গরম খাবার যেমন খিচুড়ি, স্যুপ বা গরম দুধ দিতে পারেন।
  • পর্যাপ্ত পানি পান করানো: শীতকালে বাচ্চারা কম পানি পান করতে পারে, তাই পর্যাপ্ত পানি খাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।

৪. ঘুম ও বিশ্রাম

বাচ্চাদের ভালো ঘুম তাদের শরীর উষ্ণ রাখতে এবং সুস্থ থাকতে সাহায্য করে।

  • আরামদায়ক কম্বল: ঘুমানোর সময় হালকা এবং আরামদায়ক কম্বল ব্যবহার করুন। ভারী কম্বল বাচ্চাদের জন্য অস্বস্তিকর হতে পারে।
  • তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ: বাচ্চার রুমে তাপমাত্রা প্রায় ২৪-২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রাখা উচিত। খুব ঠাণ্ডা হলে হিটার ব্যবহার করা যেতে পারে।

৫. গোসলের যত্ন

শীতকালে বাচ্চাদের গোসল করানোর সময় বিশেষ যত্ন নিতে হবে।

  • গরম পানি ব্যবহার: বাচ্চার জন্য হালকা গরম পানি ব্যবহার করুন, তবে খুব বেশি গরম পানি যেন না হয়।
  • গোসলের সময় কমান: শীতে দীর্ঘ সময় ধরে বাচ্চাদের গোসল করানো উচিত নয়, কারণ এতে ত্বক আরও শুষ্ক হয়ে যেতে পারে।
  • মৃদু সাবান ব্যবহার: মৃদু শ্যাম্পু এবং সাবান ব্যবহার করুন, যা বাচ্চাদের ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করবে।

৬. শীতের সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা

শীতকালে ঠাণ্ডা, ফ্লু এবং অন্যান্য সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। তাই বাচ্চাদের সংক্রমণ থেকে সুরক্ষিত রাখতে সতর্কতা নেওয়া প্রয়োজন।

  • হাত ধোয়ার অভ্যাস: বাচ্চাকে আদর করার আগে এবং খাওয়ানোর আগে অবশ্যই হাত ধুয়ে নিন।
  • ভিড় এড়িয়ে চলুন: জনাকীর্ণ স্থানে বাচ্চাদের নিয়ে যাওয়া থেকে বিরত থাকুন, কারণ সেখান থেকে ভাইরাসের সংক্রমণ হতে পারে।
  • টিকা নিশ্চিত করা: বাচ্চার স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য সময়মত সব টিকা প্রদান করা উচিত।

৭. শীতের তাপমাত্রা অনুযায়ী বাচ্চার জীবনধারা

  • ব্যায়াম এবং খেলাধুলা: শীতে ঘরের ভেতর ব্যায়াম এবং হালকা খেলাধুলা করাতে পারেন যাতে বাচ্চার শরীর সক্রিয় থাকে।
  • বাইরের রোদ: সকালে হালকা রোদে বাচ্চাকে ৩০ মিনিটের মতো রাখতে পারেন, যা শরীরের জন্য উপকারী ভিটামিন ডি সরবরাহ করবে।

৮. বাবা-মায়ের করণীয়

  • বাচ্চাকে উষ্ণ রাখুন: ঘরে পর্যাপ্ত উষ্ণ পরিবেশ বজায় রাখুন এবং বাইরে নিয়ে গেলে সঠিক পোশাক পরিয়ে রাখুন।
  • পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করুন: ঘরের সব কিছু পরিষ্কার রাখুন এবং ঠাণ্ডা-কাশির রোগীদের থেকে বাচ্চাকে দূরে রাখুন।

এই সমস্ত বিষয়গুলো মনে রেখে চললে শীতের সময় বাচ্চারা আরামদায়ক এবং সুস্থ থাকবে। শীতকালে বাচ্চাদের সুরক্ষিত রাখতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা এবং সঠিক পুষ্টি সরবরাহ করা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *